সিলেট জেলাধীন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাদা পাথর সিলেটের দর্শনীয় গুরত্ত্বপূর্ণ স্থান গুলোর মধ্যে একটি। সিলেট মহানগরের আম্বরখানা বা মাজারগেট হতে প্রায় ৪০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হবে সিলেটের সাদা পাথর ভ্রমণ এর জন্য। প্রসশ্ততার পাশাপাশি প্রায় ৩৫ কি.মি রাস্তা ঢালাই করা।
সিলেটে যেখানে থাকতে পারেন
দূর থেকে আসা পর্যটকগণের সিলেট মহানগরে থাকা বা রাত কাটানোর জন্য অনেক ধরণের আবাসিক হোটেল সুবিধা আছে। উচ্চ বিলাসীদের জন্য পাঁচ তারকা “গ্রান্ড সিলেট” আবাসিক হোটেল রয়েছে। সিলেট বিমান বন্দরের পাশে এটির অবস্থান। বিদেশি পর্যটক এবং খেলোয়াররা সাধারনত এই হোটেলেই ওঠেন। এর পাশাপাশি হোটেল নুরজাহানও পছন্দ করতে পারেন। আবাসিক হোটেল “রোজ ভিউ” থ্রি স্টার মানের। মূল শহরের প্রবেশ মুখে (উপশহর) এটি অবস্থিত। এই হোটেলের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় খাওয়ার উন্নত পরিবেশের পাশাপাশি সুইমিং পুল সুবিধা আছে। বিপিএল সহ বিভিন্ন টুর্নামেন্ট এর সময় বিভিন্ন দলে খেলোয়ার ও ম্যানেজমেন্ট এখানে থাকেন। এর পাশেই রয়েছে “গ্রান্ড সুরমা” হোটেল। অল্প ভাড়ায় উন্নত পরিবেশ। এসি, গিজার, ফ্রিজ এবং রেস্টুরেন্ট সুবিধা আছে এখানে। কদমতলী বাস টার্মিনালে অনেক আবাসিক হোটেল আছে। হোটেল তৌফিক অন্যতম। হযরত শাহজালাল মাজার হেট এর দুই পাশে অসংখ্যা আবাসিক হোটেল আছে। অপেক্ষাকৃত কম টাকায় এখানে থাকার সুবিধা আছে।
যেভাবে যাবেন:
সাদা পাথর, সিলেট এ প্রাইভেট গাড়ী, বাস, সিএনজি ও মোটর সাইকেলে যাওয়া যায়। নিজস্ব গাড়ী বা মোটর সাইকেল না থাকলে আপনি বাস বা সিএনজি তে যেতে পারেন। প্রাইভেট গাড়ী বা সিএনজি রিজার্ভ নিতে হয়। এতে খরচ অনেক বেশি হয়। এজন্য বাস পছন্দের তালিকায় রাখতে হবে। আম্বরখানা বা মাজারগেট হতে বাস পাওয়া যায়। (১) সাদা পাথর ভ্রমণ ও (২) বিআরটিসি নামে পৃথক ০২টি বাস সার্ভিস আছে। সাদা পাথর ভ্রমণ সাধারন বাস হলেও বিআরটিসি’র বাসটি দুই তলা বিশিষ্ট।
সিলেটের সাদা পাথর ভ্রমণের যাওয়ার পথে যা দেখতে পাবেন:
প্রতিদিন সকাল ০৮.০০ টা হতে বিকেল ০৪.০০টা পর্যন্ত প্রতি ৩০ মিনিট পরপর বিআরটিসি’র দুই তলা বাস যাতায়াত করে। সিলেট হতে সাদা পাথর এবং সাদা পাথর হতে সিলেট যাতায়াত করে। সিলেটের সাদা পাথর ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য । বাসের জন্য ৩০ মিনিটের বেশি অপেক্ষা করতে হবে না। বিআরটিসি’র ভাড়া ৮৫ টাকা জনপ্রতি। বাসের দোতলায় ভ্রমণ করলে উপভোগের দ্বিগুন বেড়ে যাবে। দোতলায় ভ্রমণ করলে রাস্তার দুই পাশের ন্যাশনাল টি-এস্টেট টা-বাগান(লাক্কাতুরা), বাংলাদেশের প্রথম চা-বাগান মালনিছড়া, সিলেট ক্যাডেট কলেজ দেখতে পাবেন। এদের সবুজ সমারোহের চা-বাগান আর গাছগাছালি আপনার ভ্রমণকে সার্থক করবে। সেইসাথে সিলেট বিমানবন্দর, বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক ও পাথর ভাঙ্গা মেশিন দেখা যাবে। হাইটেক পার্ক অতিক্রম করার পর সামনের দিকে তাকালে পাহাড় দেখতে পাবেন। এই দৃশ্যগুলি ভালোভাবে উপভোগ করার জন্য বিআরটিসি’র দুই তলা বাসের দোতলায় ভ্রমণ করতে হবে।
সাদা পাথরে নৌকা ভ্রমণ:
আপনি যে বাহনই ভ্রমণ করেন না কেন সাদা পাথর পৌছার পর মূল স্পর্টে যাওয়ার জন্য নৌকা ভ্রমণ করতে হবে। প্রতি নৌকা ৮০০ (আটশত) টাকা। যাওয়া-আসা মিলে ০২-০৩ ঘন্টা সময় দিয়ে থাকে। তবে নৌকার মাঝির সাথে আলাপের মাধ্যমে সময় বৃদ্ধি করা যায়। একটি নৌকায় ০১ থেকে সর্বোচ্চ ০৮ জন ভ্রমণ করা যায়। আপনার দল ০৮ জনের কম সদস্যের হলে এবং আপনার মন চাইলে অন্যান্য পর্যটকদের সাথে নিতে পারেন। এতে কোনো সমস্যা হবেনা। তবে ৫-৬ জন হলে অন্যদের না নেওয়াই ভালো। এতে সময় ও অন্যান্য পারিপার্শিক বিষয়ে স্বাধীনতা পাবেন। নৌকা ঘাটিতে একটি টিকিট কাউন্টার আছে। এখান থেকেই টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। যে নৌকায় যাবেন সেই নৌকায় ফিরে আসবেন। এজন্য অবশ্যই মাঝির মোবাইল নিবেন।
মূল স্পট:
নৌকাযোগে মূল স্পটে পৌঁছার পর ৩০০-৪০০ মিটার হাটতে হবে। আপনি বেশি সৌখিন হলে ঘোড়ায় যেতে পারবেন। ছোট বাচ্চাদের বেশি আবদার না থাকলে হেটে হেটে যাওয়ায় ভালো। আর এই ৩০০-৪০০ মিটার যাওয়ার পরই ছোট-বড় স্তর, স্থুপ বা জমিন দেখতে পাবেন। এখানে শুধু পাথর আর পাথর দেখকে পাবেন। সাদার সাথে অন্য রংয়েরও পাথর আছে। এই পাথরের উপর দিয়ে বয়ে চলছে স্বচ্ছ পানির স্রোত। পাহাড় থেকে নেমে আসা এই পানি খুবই স্বচ্ছ। এখানের পাথর আর পানির একত্রিত সৌন্দর্য আপনাকে ভিজতে আগ্রহ জাগাবে।
সিলেটের সাদা পাথর ভ্রমণের সুবিধাসমূহ:
সাদা পাথর মূল স্পটে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত আছে। এখান থেকে ভারতের বিশাল বিশাল পাহাড় দেখতে পাবেন। সাথে বড় বড় পাথর। পাহাড়ের উপর মেঘমালা। মনে হবে এই বুঝি বৃষ্টি নামবে। মাঝে মাঝে পাথরের কিট শব্দ শুনতে পাবেন । এতে ভয় পাবেরন না। এগালো ভারতীয়দের পাথর কাটার শব্দ। সীমান্তের কাছে বাংলাদেশী যায়গায় মসজিদ ও গণসৌচাগারের সুবিধা রয়েছে। এখানে কাপড় পরিবর্তন করতে পারবেন। তাছাড়াও কাপড় পরিবর্তনের জন্য ভ্রাম্যমান চেন্জ রুম পাবেন। বেশি পানি ও পানির স্রোতে গা ভাসানোর জন্য টিউব পাবেন। বিশ্রামের জন্য চৌকি-বেড আছে। এগুলো ব্যবহারের আগে ভাড়া দরদাম করে নিবেন।
যা করা ভালো:
ভালোভাবে উপভোগের জন্য বর্ষা মৌসুমে সাদা পাথর ভ্রমণ করবেন। চামড়ার জুতার বদলে সাধারন সেন্ডল বা বার্মিজ নিতে পাবেন। সাথে শুকনো খাবার।