প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়জিত কর্মচারীগণ তার মাসিক বেতনের পাশাপাশি নানা রকম আর্থিক সুবিধা পেয়ে থাকেন। এর মধ্যে কিছু সুবিধা বেতনের সাথে। আর কিছু ভাতা মাসিক বেতনের বাহির হতে। কিছু তার নিজ দপ্তর হতে। কিছু অন্য দপ্তর হতে। অন্য দপ্তরের মধ্যে অন্যতম হলো বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড। বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড হতে কিছু সুবিধা কর্মচারী জীবিত থাকা অবস্থায় পায়। কর্মচারীর মৃত্যুর পর তার পরিবারের সদস্যগণ কিছু সুবিধা পায়। বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড (বিকেকেবি) হতে সরকারী তথা প্রজাতন্ত্রের অসামরিক কাজে নিয়জিত কর্মচারীদের জন্য সাধান চিকিৎসা অনুদান অন্যতম।
সরকারী কর্মচারীদের চিকিৎসা অনুদান কারা পায়?
সরকারি ও বোর্ডের তালিকাভুক্ত স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার কর্মরত/অবসরপ্রাপ্ত/মৃত কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সদস্য সাধারন চিকিৎসা অনুদান প্রদান করা হয়। বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের কল্যাণ তহবিল ও যৌথবীমা তহবিল আছে। যেসকল কর্মচারী তাদের মাসিক বেতন হতে চাঁদা কর্তন করেন তারা এসুবিধা পেয়ে থাকেন। কর্মচারী বলতে ০১ হতে ২০তম বেতন গ্রেডভুক্ত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বুঝাবে। কর্মচারী চাকরিতে যোগদানের তারিখ হতে আমৃত্যু এ আর্থিক সুবিধা পাবেন। হোক তা চাকরিরত কিংবা অবসরপ্রাপ্ত। কর্মচারী মৃত হলে তার পরিবারের সদস্যগণ কর্মচারীর বয়স ৭৫ (পঁচাত্তর) বছর পর্যন্ত এ অনুদান প্রাপ্য হবেন। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, পুলিশের ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারী, পানি, রেলওয়ে, বিদ্যুৎ বিভাগ এবস সুবিধা পায়না। আরও কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যেগুলো বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড হতে এ সুবিধা পায় না। আপনি বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড হতে আর্থিক সুবিধা পাবেন কিনা জানার জন্য আপনার অফিসের অফিসার, অফিসিয়াল স্টাফ/ কেরানীর কাছে জিজ্ঞাস করুন। আরও জানতে বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের এই https://bkkb.gov.bd/ website থেকে মোবাইল নম্বর নিয়ে যোগাযোগ করুন।
![সরকারী কর্মচারীদের সাধারন চিকিৎসা সুবিধা](http://familiarit.com/wp-content/uploads/2024/03/সরকারী-কর্মচারীদের-সাধারন-চিকিৎসা-সুবিধা-300x168.png)
কার চিকিৎসা জন্য আবেদন করবেন?
কর্মচারী তার নিজ, স্বামী বা স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি ও পিতা-মাতার চিকিৎসার আর্থিক সাহায্যের জন্য আবেদন করতে পারবেন। সন্তানের চিকিৎসার ক্ষেত্রে সন্তানের বয়সসীমা সর্বোচ্চ ২৫ বেধে দেয়া আছে। তবে প্রতিবন্ধি সন্তানের জন্য কোন বয়সসীমা নেই। পিতামাতার চিকিৎসা সাহায্যের জন্য আবেদন করলে স্থানীয় সরকার কর্তৃক প্রদেয় নির্ভরশীলতার সনদ দাখিল করতে হবে। কর্মচারী বেচে থাকা অবস্থায় কর্মচারী নিজে আবেদনকারী হবেন। কর্মচারী মৃত হলে তার পরিবারের সদস্য আবেদন করবেন।
কখন এবং কোথায় সরকারী কর্মচারীদের চিকিৎসা অনুদান এর আবেদন দাখিল করবেন?
প্রতিবছরে একবার করে বছরের যে কোনো সময় আবেদন করা যায়। বছর হিসাব হবে ক্যালেন্ডার বছরে। জানুয়ারি হতে ডিসেম্বর পর্যন্ত বছর হিসেবে যে কোনো সময়ে আবেদন দাখিল করতে পারবেন। চিকিৎসার পরবর্তী ০২ (দুই) বছরের মধ্যে আবেদন দাখিল করতে হবে। ০২ বছর পূর্বের বিল-ভাইচার গ্রহণযোগ্য নয়। চিকিৎসা এবং আবেদন দাখিল এর মধ্যে ০২ বছরের বেশি ব্যবধার হলে আবেদন বাতিল হবে। শুধু ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন বা মহানগরের মধ্যে কর্মরত কর্মচারীগণ মহাপরিচালক, বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড, প্রধান কার্যালয়, ঢাকায় আবেদন প্রেরণ করবেন। অন্য এলাকার কর্মচারীগণ তাদের স্ব-স্ব বিভাগের পরিচালক, বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড, বিভাগীয় কার্যালয়, ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর বা ময়মনসিংহ বরাবর আবেদন প্রেরণ করবেন। কর্মচারী কর্মরত হলে তার উর্ধতন কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত ফরওয়াডিং/ অগ্রগামীপত্রের মাধ্যমে আবেদন দাখিল করতে হবে। কর্মচারী অবসরপ্রাপ্ত বা মৃত হলে ফরওয়াডিং/ অগ্রগামীপত্র বা অফিসের যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আবেদনের সাথে অবসরগ্রহণের অফিস আদেশ দিতে হবে।
সরকারী কর্মচারীদের চিকিৎসা অনুদান এর আবেদন ফরমের জন্য এখানে ক্লিক করুন
বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের অন্যান্য সেবাসমূহ>
কি রোগের চিকিৎসার জন্য করবেন?
এই অনুদানের নামই সাধারন চিকিৎসা অনুদান। তাই সাধারন রোগের চিকিৎসা হলেও সেই কাগজপত্র দিয়ে আবেদন করা যায়। তাই বলে জটিল রোগের চিকিৎসা অনুদান দেয়া হবে না তা নয়। ডায়াবেটিকস, মাইগ্রেন, হৃদরোগ, লিভার সিরোসিস, কিডনী, আলসার, ক্যানসার, গাইনি, অর্থোপেডিকস, চর্ম, দন্ত চিকিৎসাসহ ছোট-বড় যেকোন ধরণের অপারেশন থেকে শুরু করে সকল ধরণের চিকিৎসার জন্য আর্থিক সাহায্য দেয়া হয় বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড হতে।
কি কি কাগজপত্র দিতে হয়?
চিকিৎসায় অপারেশন হলে অবশ্যই হাসপাতাল বা ক্লিনিকে ভর্তি ছিলেন। হোক সেটি সরকারী বা বেসরকারী। সেক্ষেত্রে আবেদনের সাথে ছাড়পত্রের মূলকপি দিতে হবে। তবে চোখ বা দাতের অপারেশন সাধারণত ডাক্তারগণ তাদের ব্যক্তিগত চেম্বারে ১-২ ঘন্টায় করে থাকেন। সেক্ষেত্রে হাসপাতাল বা ক্লিনিকে ভর্তির প্রয়োজন হয়না । তাই সেক্ষেত্রে ছাড়পত্রের প্রয়োজন নেই। তবে ডাক্তার তার প্যাডে চিকিৎসা বিস্তারিত লিখে দিবেন এবং কত টাকা নিয়েছেন তা ও উল্লেখ করবেন। কোনো নমুনা পরীক্ষা করলে তার বিল/ভাউচারের মূল কপি দিতে হবে। ব্যবস্থাপত্র বা ছাড়পত্র অনুযায়ী ঔষধ ক্রয় করলে ঔষধ ক্রয়ের ভাউচার বা ক্যাশ মেমোর মূলকপি দিতে হবে। ভাউচার বা ক্যাশ-মেমোতে অবশ্যই ফার্মেসির নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, ড্রাগস লাইসেন্স থাকতে হবে। সাথে বিক্রেতার স্বাক্ষর, তারিখ এবং ভাউচারের পাতার ক্রমিক উল্লেখ থাকতে হবে। আপনি যে টাকা খরচ করেছেন তার প্রমাণ হিসেবে ছাড়পত্র (প্রযোজ্যক্ষেত্রে) ও বিল-ভাউচারের মূল কপি দিতে হবে।
অন্যান্য কাগজপত্র
- রোগ বুঝানোর জন্য পরীক্ষার রিপোর্ট ও ব্যবস্থাপত্রের ফটোকপি সত্যায়িত করে দিতে হবে।
- সর্বশেষ বেতন নির্ধারণী (পে-ফিক্সেশন) এর সত্যায়িত কপি।
- আবেদনকারীর নিজের সক্রিয় ব্যাংক হিসাবের MICR চেক এর ফটোকপি।
- একটি ব্যয় বিবরণী (খরচের ধরণ, তারিখ ও টাকার কলামসহ)।
- যথাযথবাবে পূরণকৃত আবেদন ফরম।
- আবেদরকারীর রঙ্গিন ছবি।
- প্রতিটি কাগেজের মূলকপি প্রতিস্বাক্ষরিত এবং ফটোকপি সত্যায়িত হতে হবে। আবেদন ফরম প্রত্যয়ন, অগ্রগামী, কাগজ প্রতিস্বাক্ষর ও সত্যায়িত করবেন সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর অফিস প্রধান। আর অফিস প্রধানের ক্ষেত্রে তার উর্ধতন কর্মকর্তা এ কার্য সম্পাদন করবেন।
মনে রাখবেন
কোনোভাবেই অতিরিক্ত ভাউচার বানানোর চেষ্টা করবেন না। সরকারী কর্মচারীদের চিকিৎসা অনুদান এর জন্য আপনার দাখিলকৃত কাগজপত্র কমিটি যাচাই-বাছাই করবেন। সেখানে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার থাকেন। আপনার দাখিলকৃত কাগজপত্র দেখেই উনি বুঝতে পারবেন আপনার চিকিৎসায় কত টাকা খরচ হতে পারে। উপজেলা বা জেলা পর্যায়ের ক্লিনিকে কত টাকা ব্যয় হতে পারে। মোট কথা যত টাকা ব্যয় হয়েছে তত টাকারই বিল দাখিল করেন। বেশি খরচ দেখাতে গিয়ে কমিটির চোখে সন্দেহের সৃষ্টি হলে আপনার আবেদন বাতিল হতে পারে। অন্যান্য নিয়মাবলী আবেদন ফরমের ২য় পাতায় দেয়া আছে।
সরকারী কর্মচারীদের চিকিৎসা অনুদান হিসেবে কত টাকা পাবেন, কিভাবে পাবেন?
সরকারী কর্মচারীদের চিকিৎসা অনুদান প্রতি বছর একবার সর্বোচ্চ টা: ৪০,০০০/- পর্যন্ত এ অনুদান প্রদান করা হয়। আবেদন প্রাপ্তির পর সফটওয়্যারে এন্ট্রি করা হয়। আবেদনকারীর মোবাইল ফোনে ক্ষুদেবার্তার মাধ্যমে আবেদনের ডিজিটাল ডায়রি নম্বর ও তারিখ জানানো হয়। আবেদনে কোন ত্রুটি থাকলে তা এসএমএস ও পত্রের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়। প্রতিমাসের প্রাপ্ত আবেদনসমূহ পরবর্তী মাসের ২য় সপ্তাহের মধ্যে উপকমিটির সভার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়। অনুমোদিত টাকা ইএফটির মাধ্যমে আবেদনকারীর ব্যাংক হিসাবে প্রেরণ করা হয়।