familiarit

কল্যাণ বোর্ডের চিকিৎসা অনুদান-এর আদ্যোপান্ত

প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত সরকারি কর্মচারীগণ কর্মরত, পিআরএল ভোগরত, অবসরকালীন কিংবা মৃত্যুজনিত কারণে তিনি বা তার পরিবার সরকারের কাছ থেকে নান রকম আর্থিক সুবিধা পেয়ে থাকেন। তারমধ্যে বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের চিকিৎসা অনুদান অন্যতম। 

কল্যাণ বোর্ডের চিকিৎসা অনুদান কেন দেয়া হয়-

বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড প্রজাতন্ত্রের সকল কর্মচারী এবং বোর্ডের তালিকাভুক্ত ২৫টি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার কর্মচারীসহ প্রায় ১৯ লক্ষ কর্মচারীর আর্থ সামাজিক নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে বিভিন্ন কল্যাণধর্মী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। কর্মচারীগণ প্রজাতন্ত্রের জনগণকে সার্বক্ষণিক সেবা প্রদানে সর্বদাই সচেষ্ট থাকেন। 

জনগণের সেবায় নিয়োজিত সরকারী কর্মচারীগণ বিভিন্ন সময়ে নানাবিধ শারীরিক জটিলতায় ভোগেন। তারা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের ডাক্তারী পরামর্শ সেবা, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ডাক্তারী ব্যবস্থাপত্র, প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও হাসপাতালে ভর্তির মাধ্যমে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। রোগের ধরণ বিশেষে চিকিৎসা ব্যয় বিভিন্ন পরিমানের হয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে তা সাধ্যের বাহিরে চলে যায়। সরকারি কর্মচারীদের চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহের ক্ষেত্রে  দুঃখ কিছুটা লাঘব করার জন্য বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড চিকিৎসা অনুদান প্রদান করে থাকে।

বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড

চিকিৎসা অনুদানের ধরন-

কর্মচারীর নিজ এবং পরিবারের সদস্যদের রোগ ও চিকিৎসার ধরণের ভিত্তিতে এই প্রতিষ্ঠান ০২ (দুই) ধরণের চিকিৎসা অনুদান প্রদান করে থাকে। যথা:

০১। জটিল ও ব্যয়বহুল রোগের চিকিৎসা অনুদান:

কর্মরত ও পিআরএল ভোগরত সরকারি কর্মচারীর নিজের জটিল রোগের চিকিৎসার জন্য চাকরি জীবনে এক বা একাধিকবারে সর্বোচ্চ ২ (দুই) লাখ টাকা আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়। জটিল ও ব্যয়বহুল রোগগুলো হলো:

  1. ক্যান্সার;
  2. হৃদরোগ (ব্লক, ওপেন হার্ট সার্জারি ও অন্যান্য);
  3. কিডনি-ব্যাধি;
  4. হেপাটাইটিস;
  5. ডায়াবেটিস-মেলিটাস;
  6. পক্ষাঘাত;
  7. বক্ষব্যাধি;
  8. কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন ও বিয়োজন;
  9. দূর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হওয়া; এবং
  10. কল্যাণ বোর্ড কর্তৃক গঠিত মেডিকেল বোর্ড কোন রোগকে জটিল ও ব্যয়বহুল মনে করলে তা এর আওতায় পরবে।

এখানে অবশ্যই মনে রাখতে হবে শুধু কর্মরত ও পিআরএল ভোগরত কর্মচারী নিজের জন্য জটিল ও ব্যয়বহুল চিকিৎসার অনুদানের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এ অনুদান শুধু প্রধান কার্যালয়, ঢাকা হতে প্রদান করা হয়। অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ করে ফরম ডাউনলোড করতে হয়। ফরমে বর্ণিত নিয়মাবলী ও নির্দেশনা মোতাবেক প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদনের হার্ডকপি ডাকযোগে, কুরিয়ার সার্ভিস বা সরাসরি প্রেরণ করতে পারেন। জটিল ও ব্যয়বহুল চিকিৎসার অনুদানের আবেদনের জন্য এখানে ক্লিক করুন…

০২। সাধারন রোগের চিকিৎসা অনুদান:

উপরে বর্ণিত জটিল ও ব্যয়বহুল রোগসহ সকল রোগের চিকিৎসা ব্যয় সাধারন চিকিৎসা অনুদানের আওতায় আসবে। কর্মচারী চাকরিতে যোগদানের তারিখ হতে আমৃত্যু এ আর্থিক সুবিধা পাবেন। হোক তা চাকরিরত কিংবা অবসরপ্রাপ্ত। কর্মচারী মৃত কিংবা জীবিত হলে তার পরিবারের সদস্যগণ কর্মচারীর বয়স ৭৫ (পঁচাত্তর) বছর পর্যন্ত এ অনুদান প্রাপ্য হবেন।

পরিবারের যেসকল সদস্যের চিকিৎসার জন্য আবেদন করা যাবে?

কর্মচারী নিজের জন্য আমৃত্যু এ সুবিধা পাবেন । একজন কর্মচারী আজীবন তার নিজের চিকিৎসা জনিত ব্যয় নির্বাহের জন্য আবেদন করতে পারবেন। কর্মরত, অবসরপ্রাপ্ত, জীবিত কিংবা মৃত কর্মচারীর বয়স ৭৫ বছর হওয়া পর্যন্ত তার আয়ের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল সদস্যদের জন্য আবেদন করতে পারবেন। নিজ, তার স্বামী/স্ত্রী, সন্তান-সন্তদি ব্যতীত অন্যান্যদের জন্য আবেদন করলে নির্ভরশীল সনদ দিতে হবে। নির্ভরশীল সদস্যদের ধরণ:

  • কর্মচারীর বয়স ৭৫ বছর হওয়া পর্যন্ত তার স্বামী/স্ত্রীর জন্য আবেদন করতে পারবেন।
  • কর্মচারীর ছেলের বয়স ২৫ বছর হওয়া পর্যন্ত
  • অবিবাহিত মেয়ের বয়স ২৫ বছর হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
  • কর্মচারীর পিতা-মাতার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এজন্য স্থানীয় সরকার (ইউপি চেয়ারম্যান/ পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর) কর্তৃক প্রদত্ত নির্ভরশীল সনদ দিতে হবে।
  • যেকোনো বয়সের প্রতিবন্ধি সন্তান ও তালাকপ্রাপ্তা বা বিধবা বোন।
  • কর্মচারীর নাবালেক ভাই বা বোন।

কারা আবেদনকারী হবেন?

কার চিকিৎসার জন্য কে আবেদন করবে অনেক কর্মচারী তা বুঝতে পারেন না। আবেদনকারীর ধারাবাহিকতা নিচে দেয়া হলো:

  1. চিকিৎসা যারই হোক না কেন কর্মচারী জীবিত হলে তিনিই আবেদনকারী হবেন।
  2. কর্মচারী মৃত হলে তার স্বামী/স্ত্রী।
  3. স্বামী/স্ত্রী মৃত হলে তার পিতা-মাতা বা সন্তান। এক্ষেত্রে একাধিক জনের চিকিৎসা হলে যেকোন একজনকে আদেনের ক্ষমতা দিতে হবে।

কোন সময় আবেদন করবেন?

কল্যাণ বোর্ডের চিকিৎসা অনুদানের জন্য বছরের যেকোন অফিস কর্মদিবসে আবেদন করতে পারবেন। ইংরেজি ক্যালেন্ডার বা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী বছরে ০১ (এক) বার আবেদন করতে পারবেন। অর্থাৎ যেকোন ইংরেজি সালের ০১ জানুয়ারি হতে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত যেকোন সময় আবেদন করা যাবে। এভাবে প্রতি ইংরেজি সালে একবার করে আবেদন করতে পারবেন।

চিকিৎসা ব্যয় সংঘটিত হওয়ার ০২ (দুই) বছরের মধ্যে আবেদন করতে হবে। আবেদনের তারিখের ০২ বছর পূর্বের কাগজপত্র অনুদান পাবার জন্য বিবেচিত হবে। কেউ ০১ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে আবেদন দাখিল করলে ০১ ডিসেম্বর, ২০২২ তারিখের পরবর্তি সময়ের কাগজ দিয়ে আবেদন করতে পারবেন।

কোন রোগের কী চিকিৎসার জন্য কত টাকা দেয়া হয়?

রোগ ও চিকিৎসার ধরণ এবং খরচের পরিমানের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন হারে সাধারন চিকিৎসা অনুদান প্রদান করা হয়। কমন কিছু রোগ এবং এসব রোগের চিকিৎসার খরচের ভিত্তিতে অনুদানের বিভিন্ন হার নিচে দেয়া হলো:

১। কিডনি, ডায়ালাইসিস, ক্যানসার, থ্যালাসেমিয়া, হৃদরোগ, স্ট্রোক, লিভার সিরোসিস ও পিএলআইডিসহ অন্যান্য জটিল রোগের জন্য -৪০,০০০/- মাত্র।

২। সিজার অপারেশন, জরায়ু অপারেশন, মূত্রনালী অপারেশন, পাইলস ও হারনিয়া অপারেশন- ২৫,০০০/- মাত্র।

৩। এ্যাজমা, নিউমোনিয়া, ডায়াবেটিকস মেলাইটিস ও চোখের চিকিৎসা- ২০,০০০ – ২৫,০০০/- মাত্র।

৪। জ্বর, সর্দি, কাশি, বাতজ্বর ও অন্যান্য সাধারন রোগের জন্য- ১০,০০০ – ১৫,০০০/- মাত্র।

৫। অন্যান্য রোগের ক্ষেত্রে রোগের ধরন ও খরচের প্রকুতি অনুযায়ী কমিটি অর্থ মঞ্জুরি প্রদান করে থাকে।

এখানে উল্লেখ্য যে, অনুদান মঞ্জুরির এ হার বাস্তবতার নিরিখে পরিবর্তন হতে পারে। কমিটি আবেদনের সাথে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও বিল-ভাউচার যাচাই করে এ হার কম-বেশি করে থাকে। কেউ সিজার অপারেশনের ২৫,০০০/- এর কম ভাউচার দিলে তিনি টাকা কম পাবেন। আবার সিজার সময় বা পরবর্তী মা বা শিশুর সমস্যা দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে আইসিইউ-তে ভর্তি হওয়া লাগতে পারে। সেক্ষেত্রে ব্যয় বা খরচও বেশি হবে। খরচ বেশি হলে কাগজ দাখিল করা সাপেক্ষে অনুদানও বেশি পাবেন। এটি সম্পূর্ণ কমিটির বিষয়। তবে খরচ যাই হোক না কেন অনুদানের পরিমান টাকা=৪০,০০০/- এর বেশি হবে না।

সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী:

প্রশ্ন-১। কর্মচারী বলতে কাদের বুঝায়?

উত্তর: প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত ০১ হতে ২০তম গ্রেডের সকল কর্মচারীকে বুঝাবে।

প্রশ্ন-২। কল্যাণ বোর্ডের পরিবারের সজ্ঞা কী?

উত্তর: (ক) কর্মচারী পুরুষ হলে তার স্ত্রী/স্ত্রীগণ; নারী হলে তার স্বামী এবং (খ) কর্মচারীর সাথে একত্রে বসবাসরত এবং তার আয়ের উপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল সন্তান-সন্তদিগণ, পিতা-মাতা, দত্তক পুত্র (হিন্দু কর্মচারীর ক্ষেত্রে), নাবালেক ভাই এবং অবিবাহিতা,  তালাকপ্রাপ্তা বা বিধবা বোন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *